ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জেলায় অর্ধযুগ পর বাড়ছে জমি বিক্রির সরকারি মৌজা রেইট

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: দীর্ঘ অর্ধযুগ পর কক্সবাজার জেলায় বাড়ছে সরকারি মৌজা রেইট (ভূমি মূল্য)। সর্বশেষ ২০১৬ সালের পর এবার পূনরায় নির্ধারিত হচ্ছে সরকারিভাবে নিবন্ধনের ভূমি মূল্য। যা বিগত সময়গুলোতে অতিরিক্ত মৌজা রেইট বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন কারণে চলতি ২০২২ সন পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে জেলার জায়গা-জমি হস্তান্তরের এই মৌজা রেইট।

জেলা রেজিষ্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় সর্বশেষ সরকারিভাবে জমির মূল্য নির্ধারিত হয় ২০১৬ সালে। যার ফলে গত ২০১৫ ও ২০১৬ সালে আর সরকারিভাবে জমির মূল্য নির্ধারণ করার প্রয়োজন হয়নি। এরপর বিগত ২০১৭-২০১৮ সনেও পূর্বের মৌজা রেইট বলবৎ রাখে জেলা রেজিষ্ট্রেশন কার্যালয়। অতিরিক্ত মৌজা রেইটের কারণে ভূমি রেজিস্ট্রেশন কমে আসলে বিগত ২০১৭-২০১৮ সনের মৌজা রেইটও বলবৎ রাখে পরের ২০১৯-২০২০ সনে। ওই সরকারি মূল্য দিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চললেও বাজার ভাউ মূল্যের চেয়েও বেশি হওয়ায় জমি নিবন্ধন কমে আসে। তাই বিগত ২০১৯-২০২০ সনের মৌজা রেইট বলবৎ রেখে ২০২১ ও ২০২২ সনের জন্যও বহাল রাখে নিবন্ধন অধিদপ্তর। যা এই বৎসর পরিবর্তন আসছে বলে জানা গেছে।
সদর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার প্রায় ৪৪টি জমির শ্রেণী প্রতীয়মান। প্রতিটি শ্রেণীর জমির মূল্য ভিন্ন ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন; ২০০৭ সালে কক্সবাজার পৌরসভার প্রতি শতক অর্থাৎ ০৩ কড়া নাল শ্রেণী জমির মৌজা রেইট নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৫,৮৪৬ টাকা। একই জমির মূল্য পরের বৎসর ২০০৮ সালে বৃদ্ধি করে করা হয় ১,২৫,৬৩৭ টাকা। ওই জমি ২০০৯ সালে নির্ধাররিত হয় ১,৮৪,৬৪১ টাকা। একই জমি ২০০৯ সালে পুনরায় এক লাফে নির্ধারিত হয় ৪,৬১,৬০৫ টাকায়। একই জমি ২০১৪ সালে এসে বাড়ানো হয় ২.৫ গুণ অর্থাৎ ১০,৩৫,১৯১ টাকায়। পরের বৎসর ২০১৫ সালে জমি হস্তান্তরে ধস নামলে ২০১৪ সালের মৌজা রেইট বলবৎ রাখা হয়। ২০১৬ সালে এসে ওই জমির রেইট নির্ধারণ করা হয় ১১,০৮,৯০৭ টাকায়। যাহা এই বৎসর আবারও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা চলছে।
বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের পর এবার জেলা রেজিষ্ট্রার মৌজা রেইট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পুরো জেলাব্যাপী মৌজা রেইট বৃদ্ধি পাবে। যা বাজার মূল্য কম হলেও সরকারিভাবে নির্ধারিত ওই মৌজা রেইটের সংখ্যা নির্ধারণ করে স্ট্যাম্প ফি, উৎস কর, রেজিঃ ফি ও স্থানীয় কর পরিশোধ করেই ভূমি নিবন্ধন করতে হবে।

ভুক্তভোগী অনেকে ক্ষোভের সূরে মন্তব্য করেছেন, পৌরসভায় এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে প্রতি গন্ডা ৫ লক্ষ টাকা বেচা-বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এসব জমি রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে দলিলে লিখতে হচ্ছে নাল জমিতে প্রতি গন্ডায় প্রায় ২১ লক্ষ টাকা, ভিটি জমিতে প্রায় ৩৬ লক্ষ, বাড়ী ভিটি হলে প্রায় ৪৬ লক্ষ টাকা, দোকান ভিটি হলে প্রায় ৬৮ লক্ষ টাকা। ফলে সরকারিভাবে পে-অর্ডার ও অন্যান্য রেজিস্ট্রেশন খরচসহ প্রতি গন্ডায় নাল জমিতে ব্যয় হয় প্রায় ২ লক্ষ টাকা, ভিটি জমি হলে ৩ লাখের অধিক, বাড়ী শ্রেণী হলে ৪ লাখের অধিক, দোকান শ্রেণী হলে ৬ লাখের অধিক। হিসাব করলে দেখা যায় জমি ক্রয় এবং রেজিস্ট্রেশন খরচ প্রায় একই। এমতাবস্থায় মৌজা রেইট দলিলে লিখা বাধ্যতামূলক বিধায় এসব জমিনে রেজিস্ট্রেশন খরচ পোষাতে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্ট ক্রেতাকে।
অনেকে আবার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন; এমনিতেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জমি বেচা-কেনার অনুমতি সংগ্রহের পর থেকে জেলাব্যাপী ভূমি হস্তান্তরে ধস নামে। তার উপর জেলায় মৌজা রেইট আবার পুনঃ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে হয়তো সরকারিভাবে কিছুটা লাভবান হওয়া যাবে কিন্তু মৌজা রেইট পুনঃ বৃদ্ধির কারণে ভূমি হস্তান্তরে ধস নামলে বিপুল রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হবে সরকার। এমতাবস্থায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজন মৌজা রেইট সহনীয় পর্যায়ে রাখা।

পাঠকের মতামত: